আওয়ামী লীগের বাকশালী ক্ষমতা ও নির্মম গুমের রাজনীতি
আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিম
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বইঠার তাণ্ডবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ঢুকে পড়ে নয়া বাকশালের যুগে। ১/১১ সেনাসমর্থিত সরকার শুরু করে গুম-খুন, দুর্নীতির অভিযোগের ট্যাগ দিয়ে। সীমিত সময় হলেও ভিন্নমতকে কোনঠাসা করে পিষ্ট করা ছিল বাংলাদেশের ক্ষমতাচর্চার নৃশংস প্যারাডাইম শিফট।
ওয়ার অন টেররের প্রভাবে ১/১১ তথা সামরিক শাসন জারি হয়। বাংলাদেশে ইসলামী দল ও মুসলমানদের স্বার্থের প্রতি সহনশীল রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জেনারেল জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকোকে নৃশংস নির্যাতন করা হয়। এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর দেওয়া মিথ্যা তথ্য ভেরিফিকেশন না করেই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার চালায় সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা প্রপাগান্ডা। ঢাকার আরবান সোসাইটির কাছে বিএনপি-জামাত হয়ে ওঠে ভিলেন, এবং তাদের উপর নেমে আসে নৃশংস জুলুম ও গুম-খুনের প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম।
প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ও নেতাদের নির্যাতন করলেও কেউ টুঁ শব্দ করবে কি না তার একটা টেস্ট কেস ছিল। সেই জুলুমের সিলসিলা ধরে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক, চৌকস, প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর ৫৭ সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করে বিডিআর বিদ্রোহের নাম করে ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি। এভাবে তৈরি হয় গুম-খুনের গ্রাউন্ড।
পূর্বে ফিরি— এক-এগারোর সরকারকে দিয়ে ভারত তৈরি করে নতুন নির্বাচনী মানচিত্র। মেটিকুলাস ডিজাইনে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ৪৮% ভোট পেয়ে সংসদীয় আসন পায় ২৩০টি, এবং বিএনপি পায় ৩৩.৫% ভোটে সংসদীয় আসন মাত্র ৩০-৩২টি। মাত্র ১৪.৫% ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগ পায় ৫ গুণ বেশি সংসদীয় আসন। ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংবিধানের ১৫তম সংশোধন আনে ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়।
ভারতের ছিল সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানানো ছিল তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপশন— আওয়ামী লীগ ও তাদের কালচারাল উইং। বাংলাদেশের অধিকাংশ কবি, লেখক, সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকেরা ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি বীতরাগ, ঘৃণা, বিদ্বেষ থেকে আওয়ামী লীগকে দেয় সমর্থন প্রহসনের নির্বাচনের প্রতি। তাদের অবস্থান ছিল— শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একমাত্র শক্তি; গুম-খুন, দুর্নীতি, গণহত্যা হলেও শেখ হাসিনার বিকল্প নাই। এভাবে শুরু হয় কালচারাল ফ্যাসিজমের যুগ। আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রশাসনের গুম-খুনের বৈধতার সংস্কৃতি তৈরি করে এরা। গুম, খুন, দুর্নীতি, গণহত্যার পক্ষে তারা ছিল নিশ্চুপ। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, গায়ক রাহুল আনন্দ প্রমুখ অবরুদ্ধ করে রাখে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে।
শাপলা চত্বরে হেফাজতের উপর ম্যাসকিলিং ২০১৩ সালের ৫ই মে। অপজিশন পার্টির নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘিরে ম্যাসকিলিং করে ১৫০ জনের অধিক জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীদের।
ভারতের মদদপুষ্ট এদেশের সুশীল সমাজ, কবি-বুদ্ধিজীবী, কালচারাল সংগঠন, বামপন্থী ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন মিলে তৈরি করে গণজাগরণ মঞ্চ। ভারতের আধিপত্যবাদবিরোধী জাতীয় নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মধ্য দিয়ে হত্যা করে এবং ভিন্নমত দমন করতে ‘রাজাকার’, ‘জামাত-শিবির’, ‘বিএনপি’, ‘জঙ্গি’ ট্যাগ দিয়ে শুরু করে দমন-পীড়ন। মানুষ ভয়ে কিচ্ছু বলতে সাহস করতো না— যেন ভিক্টিমের মানবাধিকার বলতে কিছু ছিল না। তার চুপচাপ মরে যাওয়াটাই ছিল নিয়তি। এরপর দীর্ঘ ফ্যাসিবাদকালীন সময় চলতে থাকে গুম-খুন, দুর্নীতি, গণহত্যা, লুটতরাজ। সারা বাংলাদেশে নেমে আসে সুনসান গুমের নীরবতা— যেন গুম-খুন বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গ।
২.
‘গুম-খুন হচ্ছে যখন হতেই দিতে থাকো,
যত্ন করে নি২জের কবর নিজেই খুঁড়ে রাখো।’
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতি চালু হয় ৭২ সালের পর থেকে— তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। মুজিব বাহিনী ও রক্ষীবাহিনী চালায় গুম-খুন ও টর্চারসেলে জুলুম-নির্যাতন, বামপন্থী পার্টির নেতাকর্মী ও মুসলিম লীগ, জামাত, ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীদের উপর। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম গুমের শিকার হন লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান।
২০০৯ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে শুরু করে গুম-খুনের নতুন সংস্কৃতি। তৈরি করে আয়নাঘরের মতো শত শত ডিটেনশন ক্যাম্প— যেন বাংলাদেশে উত্থান হয়েছে লেডি হিটলার ও বেনিতো মুসোলিনির। ৩৬টি জেলায় গুমের শিকার হওয়া মানুষের তথ্য পেয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন।
২০২৪ সালে ছাত্রজনতা ফ্যাসিস্ট ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার পর এখন অবধি ১৮৫০টির অধিক গুমের অভিযোগ পেয়েছে। ‘১,৭৭২টি অভিযোগকে কমিশনের তথ্যভান্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে কমিশন দেখেছে, ১,৪২৭ জন (৮১ শতাংশ) নিখোঁজ ব্যক্তি পরে জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন এবং ৩৪৫ জন (১৯ শতাংশ) এখনো নিখোঁজ।’
গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন (Commission of Inquiry on Enforced Disappearances)-এর দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে এসেছে। গুমের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনাগুলোতে নির্দিষ্ট আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা জড়িত ছিলেন। গুমের বেশির ভাগ ঘটনা সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো— বিশেষ করে পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও সিটিটিসি— ৬৭ শতাংশের বেশি ঘটনার জন্য দায়ী।’
— (তথ্যসূত্র: প্রথম আলো)। ডিজিএফআই ছিল গুম-খুনের সঙ্গে মুখ্য ভূমিকায়।
এখানে গুমের শিকার হয়েছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মী— বিএনপি, জামাত, ছাত্রশিবির, সেনাকর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজমিস্ত্রী, মাদ্রাসার মাওলানা, শিক্ষার্থী ও অজস্র সাধারণ মানুষ। এমনকি ছয় বছরের একটি শিশু তার মায়ের সঙ্গে গুম হয়। গুম কমিশনের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের প্রকাশিত ইন্টারিম রিপোর্টে শিশুটির বয়স ও ঘটনার সময়কাল উল্লেখ করে বলা হয়:
“A woman along with her six-year-old son had been taken by plainclothes men and remained missing for years, showing the depth of inhumanity in enforced disappearances.”
স্থানীয় অধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘকালীন হিসাব অনুযায়ী ২০০৯–জুন ২০২৪ পর্যন্ত ‘Odhikar’ রিপোর্টে কমপক্ষে ৭০৮টি গুম রিপোর্ট করা হয়েছে (গুম হওয়া কিছু ভিক্টিম পরে ফিরে আসে বা আদালতে হাজির করা হয়)। রাষ্ট্র এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যেখানে ভিন্নমত মানেই অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। রাষ্ট্র ছিল এক অদৃশ্য কারাগার। বাকস্বাধীনতা বলতে ছিল ভারতপন্থী আওয়ামী ও মুজিব বন্দনা।
শুধু ভিন্নমত নয়— রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো চাঁদাবাজি, ব্যক্তিগত ক্ষোভ, প্রভাবশালীদের ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে কাজ করতো। গুম করার পর অনেককে হত্যা করে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে মিডিয়ার সামনে ভিক্টিমের লাশ হাজির করতো। ভিক্টিমের পরিবার ভয়ে মামলা বা হত্যার তদন্তের জন্য কোথাও যেতে পারতো না; তাদের হুমকি দেওয়া হতো— একইভাবে মেরে ফেলা হবে তাদেরও।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন,
‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুনের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এমন একজন ঘাতক আছেন, যিনি বিরোধী মতের লোকদের হত্যায় কাজ করতেন। তিনি খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করতেন। ভুক্তভোগীর মাথার মগজ ও রক্ত ফিনকি দিয়ে ওই ঘাতকের শরীরে পড়ত। মগজ ও রক্তের গরম ঘাতকের অন্যরকম অনুভূতি হতো। এছাড়া বহু মানুষের মাথায় গুলি করে পেট কেটে সিমেন্টের বস্তা বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো। হাত-পা বেঁধে রেললাইনে ফেলে রাখা হতো। বলা হতো— ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। এভাবে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে খুন করা হয়েছে, যার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।’
মেজর জিয়াউল হাসান ছিল একজন সিরিয়াল কিলার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ওএইচসিএইচআর (OHCHR) রিপোর্টে উঠে এসেছে— জিয়াউল হাসান, প্রাক্তন পরিচালক র্যাব ও পরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কার্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় প্রায় হাজার খানেক মানুষকে গুম করে খুন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ২৫ জন সেনাকর্মকর্তাকে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে ওয়ারেন্ট জারি করেছে।
রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়ে উঠেছিল জনগণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সশস্ত্র সংগঠন। রাষ্ট্রে নেমে আসে এক মানবিক বিপর্যয়। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার বন্দুকের নল জনগণের বুকে ঠেকিয়ে বুটের নিচে পিষ্ট করছিল ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু বিরোধী মতাদর্শ ও আওয়ামী নয়া বাকশালের সমালোচনার জন্য মানুষ গুম-খুন করা হতো এমন নয়— এমনও দেখা যায় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের নেতাও গুমের শিকার হয়েছেন।
‘জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া পারভেজ: নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক। ৬ জুলাই ২০১৩ তারিখে গুলশান থেকে ডিবি পুলিশের সদস্যদের দ্বারা তুলে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
এছাড়া নারীদের গুম করার পর তাদের হিজাব, নিকাবের জন্য ‘জামাত-শিবির’ ট্যাগ দিয়ে চালানো হতো অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন। যৌন নির্যাতন ছিল তাদের সবচেয়ে কুৎসিত নৃশংস কায়দার নির্যাতন। ১৯ বছরের এক তরুণীকে ২০১৭ সালে র্যাব গুম করে তার উপর চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন। ভিক্টিম গুম সংক্রান্ত কমিশনে এভাবে বর্ণনা করেন—
‘আমারে চিত করে শুইয়া দিছে। দুই হাত আর দুই পায়ের মধ্যে বাঁশ ঢুকায় দিছে। তারপর হাত-পায়ের ওপরে চারজন উঠে বসে। এরপর মুখের ওপরে একটা কাপড় দিয়ে ওপর থেকে পানি ঢালতেছিল।’
“আমার ছেলেটা বেঁচে আছে না মরেছে, অন্তত এইটা জানার অধিকার কি আমার নেই?” — এভাবে আকুতি জানান গুম হওয়া এক ভিক্টিমের মা।
নয়া বাকশালের গুমের মাৎস্যন্যায়ে আইন ছিল মৃত, ন্যায়বিচার ছিল নির্বাসিত। বিএনপির প্রভাবশালী, ভারতের আধিপত্যবাদবিরোধী নেতা এম ইলিয়াস আলীকে তার ড্রাইভারসহ গুম করা হয়। তার ব্যক্তিগত গাড়িটি ঢাকায় তার বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ইলিয়াস আলীর গুমের পর তার নিখোঁজের প্রতিবাদে ঢাকায় ও সারাদেশে হরতাল, ধর্মঘট ও বিক্ষোভে সরকারের নির্দেশে বিএনপির ৫ জনকে নারকীয়ভাবে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় বাহিনী। এখনো এম ইলিয়াস আলীর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। নানান কানাঘুষায় শোনা যায়— তাকে খুন করে আওয়ামী লীগ সরকার বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।
অজস্র অরাজনৈতিক ব্যক্তিকেও গুম করা হয়। প্রকৃত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকদের দিয়ে সাধারণ মানুষকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে গুমের পর ক্রসফায়ার দেওয়া হতো, এবং আসল জঙ্গিবাদে যারা সম্পৃক্ত ছিল তারা ছিল নিরাপদে।
২০১৬ সালে সাবেক সেনাকর্মকর্তা ও জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আজমের ছেলে আমান আজমী গুম হন। জামাতের আরেক নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে মীর আহম্মদ বিন কাসেম গুম হন। গুম হন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তাদের মধ্যে ২০১৭ সালের মার্চে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ফিরে আসেন। মীর আহম্মদ ও আমান আজমী মুক্তি পান ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকারের উৎখাতের পর।
এখনো শত শত পরিবার অপেক্ষা করছে তাদের সন্তান, ভাই, স্বামী, বাবা ফিরে আসবে। যুদ্ধপরাধের দায়ে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে চাওয়া সুখরঞ্জন বালিকে সুপ্রিম কোর্টের গেট থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ অপহরণ করে। এরপর তাকে পাওয়া যায় ভারতের কলকাতার দমদম কারাগারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাউদ্দিন আহমেদকে গুম করে ভারতের শিলং-এ নিয়ে যায় ভারতের মদদপুষ্ট সশস্ত্র বাহিনী।
এভাবে ভিন্নমতের মানুষকে গুম করে রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্য কায়েম করছিল ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ সরকার। যেন আওয়ামী লীগ সরকারের নৈরাজ্য, মাফিয়াতন্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ফেসবুকে সামান্য পোস্ট দিয়ে সমালোচনা করলেই তাকে গুম করে হত্যা করা ছিল দৈনন্দিন ইঁদুর-বিড়ালের খেলার মতো। মানুষের কোনো নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার ছিল না। যেন সবাই একটা অদৃশ্য কারাগারে আটকে আছে। সেই কারাগার ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে ছাত্রজনতা ভেঙে ফেলেছে। মজলুম মানুষ এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়, অপেক্ষায় আছেন শত শত পরিবার— গুম হওয়া মানুষগুলো ফিরে আসবে।



