জামায়াত হেরে গেলে ইসলাম হেরে যায়—এই মনোভাব সমগ্র ইসলামপন্থিদের ভেতরে গড়ে ওঠার পেছনে জামায়াতের নিজস্ব কোনো ন্যারেটিভ নেই; বরং এটা জামায়াতকে যারা শত্রু মনে করে, তাদের অবদান।
কেন বললাম কথাটা?
দেখুন, জামায়াতের বাইরে ইসলামপন্থিদের প্রায় সবাই জামায়াতকে অপছন্দই করে বলা যায়। এমনকি অনেকে তো জামায়াতকে ‘ইসলামি’ দলই মনে করে না। বড় বড় কওমি মাদরাসায় হক–বাতিলের দ্বন্দ্ব ধরনের টার্মে মওদুদির ফিতনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাহাস হয়। বেরলভি, দেওবন্দি—দুই ঘরানাতেই জামায়াত মুশকিলের।
কিন্তু যারা জামায়াত–বিদ্বেষী, যারা জামায়াতকে রাজাকারের দল বলে, একাত্তরের ঘাতক বলে, তারা জামায়াতকে রূপক ধরে ইসলামপন্থিদের এমনভাবে কটাক্ষ করে যে মনে হয় তাদের সব ক্ষোভ ইসলামের ওপর, ইসলামের বিধিনিষেধের ওপর। তাদের ধারণা, সাধারণ জনতা মূর্খ—এই কারণেই তারা ইসলামপন্থিদের কথা গোগ্রাসে গিলে খায়। তাদের মতে, এইটা তৈরি করছে জামায়াত। সুতরাং জামায়াত হটালেই দেশের উন্নতি, দশের উন্নতি।
নইলে জমিয়তে উলামার মতো কওমিদের দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার পরও কওমি শিক্ষার্থীদের অন্তত ‘রাজাকার’ টিটকারি শোনার কথা নয়। হুমায়ুন আজাদেরও ‘পাক সার জমিন সাদ বাদে’ জামায়াতের সঙ্গে কওমি মাদরাসা আর দরসে নিজামীকে গুলানোর দরকার ছিল না।
উদাহরণ হিসেবে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। দাড়ি–টুপি থাকায় ঢাবিতে চরমোনাইয়ের ছাত্র সংগঠন ইশার এক কর্মীকে শিবির বলে হেনস্তা করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এতে কী বোঝা যায়?
ফলে যারা জামায়াত–বিদ্বেষী, তাদের ভয় যেহেতু ইসলাম—তারা যেহেতু জামায়াত নাম দিয়ে প্রকারান্তরে ইসলামকে এবং বিশেষ করে ইসলামপন্থিদের হারিয়ে দিতে চান।
তাই অ–জামায়াত ইসলামপন্থিরাও চান এই জামায়াত–বিদ্বেষ প্রতিরোধ করতে, ইসলামকে রক্ষা করতে। জামায়াতের ওপর আঘাতে তাই তারা ব্যথিত হন এবং তাদের বিজয়ে উল্লাস অনুভব করেন।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, পুনর্পাঠ