এরশাদ খেদানির মুভমেন্টে ১৯৮৬ শালের ইলেকশেনর পরে খালেদা আর হাসিনা, দুই জনেই দুইটা খেতাব কামাই করেন; হাসিনার খেতাব হয় ৮৬’র বেইমান, আর খালেদা জিয়া হইলেন ‘আপোষহীন নেত্রী’।
দেশের ইতিহাসে এই দুইটা খেতাবই খুব সম্ভব পারফেক্ট; হাসিনা তার বেইমানি জারি রাখছেন, আর হাসিনার শয়তানির মোকাবেলায় খালেদা আপোষহীন থাকছেন, মুক্তির কোন আশা দেখতে না পাইয়াও ডিগনিটিতে কোন ছাড় দেন নাই, হাসিনারে মুচলেকা দেন নাই, হাসিনার কাছে মেডিকেল ইস্যুতে বিদেশ যাওয়ার দরখাস্ত দিতে ফুশলাইছে কতো জন, দলের ভিতরে, আর বাইরে ওবায়দুল কাদেরেরা; কিন্তু খালেদার শহীদি জোশ কমাইতে পারে নাই তারা, দস্তখত দেন নাই উনি।
সেই খালেদার পলিটিকেল জামানা খতম হইয়া যাইতেছে, বিম্পির এক্টিং লিডার এখন তারেক রহমান। আর বেঈমান হাসিনা তার তীর্থে; ফলে দেশের পলিটিক্সে মনে হইতেছে, দুইটা পোস্টই (খেতাব) খালি হইতেছে মনে হয়!
তো, নয়া বেঈমান তালাশ আমার কাম না, বরং পজিটিভ দিকে মন দেই। হিসাবনিকাশ কইরা মনে হইলো, ‘আপোষহীন’ খেতাবের কাবিল হইয়া উঠতে পারেন নাহিদ; ইতিহাসের অন্তত দুয়েকটা মোমেন্ট নাহিদ তার কাবিলিয়ত জাহির করতে পারছেন, কিন্তু এইটা কোন ওয়ান-টাইম ব্যাপার না, অলিম্পিক শোনার মেডেলের মতো, বরং ক্যারি করার ব্যাপার, জিন্দেগিভর কসম আর কমিটমেন্টের একটা কন্টিনুয়াস মেনিফেস্টেশন ঘটাইয়া যাইতে হবে, দুয়েকটা মোমেন্টই কাফি–এমন ভাবার উপায় নাই।
৮৬’র বেঈমান, ফেসিস্ট-টাইরেন্ট, মাফিয়া-শয়তান হাসিনারে মোকাবেলা করছেন নাহিদ, কাবিল বইলাই পারছেন, আপোষহীন বইলা জাহির করছেন তখন, দেশের মানুশ নয়া আশা দেখছে নাহিদে; জেন বা ‘হিদ’ মানে আপোষ আর উনি হইলেন ‘না-হিদ’ [আরবি-ফার্সীতে নাহিদ শব্দের অর্থ বেশ পজিটিভই, ‘উন্নত’ কিসিমের দেখলাম]!
কিন্তু আগেই কইছি, ওয়ান-টাইম ব্যাপার না ঐটা, জনতার চোখা নজরের ভিতর আছেন উনি, ইতিহাসের বড়ো বড়ো মোমেন্টে কি ডিসিশন লইতেছেন, তার বিচার করবে জনতা। তাইলে, এখন কি করবেন নাহিদ, বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন মস্ত একটা মোমেন্ট চলতেছে খুব সম্ভব!
পার্টির হেড হবার আগে হজরত ইউনুস সরকার থিকা বাইরাইছেন উনি, ঐটা একটা বেশ গুড জেশ্চার আছিলো ওনার। তারপর পার্টি দাড় করাবার বেলায় জনগনের দুয়ারে হাজির হওয়ার ঘটনাতেও ভালো সাড়া দিছে মানুষ; রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী, বিভিন্ন পলিটিকেল পার্টির মদদের বদলে, সেন্টারে বইসা ফন্দি-ফিকির করার বদলে জনতার দুয়ারে হাজির হওয়ার ভিতর আপোষহীনতার আলামত আছে আলবত!
কিন্তু ইতিহাসের এই মোমেন্টে দুয়েকটা বার্নিং কোশ্চেন হাজির হইছে। হযরত ইউনুস সরকার জুলাই ফরমান (ঘোষনাপত্র ) জারি করছেন, এরপরে দেবে জুলাই চার্টার। অনেকেই জুলাই ফরমান বেশ কম্প্রোমাইজড ভাবতেছে। জুলাই চার্টার লইয়াও খুব আশাবাদি না অনেকেই। আবার সেই চার্টারের কতোটা পরের সরকারের এজেন্ডার ভিতর থাকবে, সেই ব্যাপারেও বহু নাগরিকের ভিতর মস্ত সন্দেহ আছে।
বাস্তবে জুলাই ফরমান আর চার্টারের গুরুত্ব স্রেফ এই যে, জুলাই’রে ফর্মালি হজম কইরা নিলো রাষ্ট্র, এইটা বিপ্লবিদের সিকিউরিটির ব্যাপারে রাষ্ট্রের কসম এবং এতোটুকুই, তার বেশি অনেক অর্থ নাই। ওগুলার ভিতর দিয়া দেশের জনতা জুলাইয়ের ফল ততো পাবে না, সেই অর্থে বেহুদাই।
ফলে, জুলাই রেভলুশনের ভ্যানগার্ডদের উচিত হবে, ঐ ফরমান আর চার্টার ডিনাই করা। তারই লগে খোদ বিপ্লবের ডেফিনিশন লইয়াই ভাবা দরকার। বিপ্লব কেবল ইতিহাসের একটা সাডেন মোমেন্ট না, গ্রাজুয়াল প্রসেসে ঘটা বেশুমার ঘটনার চেইনও; বরং সাডেন মোমেন্টের বিপ্লবের কোলেটারাল ড্যামেজ বেশি হইতে পারে। একটা ডিম আর স্পার্ম থিকা একটা বাচ্চা হওয়া আলবত বিপ্লবি ঘটনা, কিন্তু তা কোনভাবেই ছাডেন মোমেন্টের ঘটনা না, একটা গেরাজুয়াল পোছেছ।
জুলাই বিপ্লবের ভিতর দিয়া জনগনের বাসনা হাজির হইছে, তার পোরতি জুলাই বিপ্লবিদের কমিটমেন্ট আছে, কিন্তু শেই বিপ্লবি খোয়াবের রিয়ালিস্ট এছেছমেন্টও করতে হবে।
কেতাবি কিছু আন্দাজ ছাড়তে কইবো আমি; জেমন ধরেন, এইখানে কোন লেনিনিস্ট বিপ্লব হয় নাই, জনগনের বাশনার আটার্ড বিস্তারিত কিছু ছিলো না, বলশেভিক টাইপের কিছু ছিলো না, জনগনকে রেডি করার পেরাভদাও আছিলো না। বড়জোর ধরেন, আপনারা বলশেভিক, তাইলে আপনাদের তাবুর নিচে জারা জড়ো হইছিলো–শহিদি জোশে জারা নিজের গতর দিয়া হাসিনার বন্দুকের মোকাবেলা করলো, তারা আপনাদের লোক হবার কথা না? কিন্তু তা তো না; তারা বিএনপি আর জামাতের লোক, তার বাইরে আমার মতো কতক ফিরিল্যান্স/ছিজনাল আতেল-এক্টিভিস্ট! তাইলে আপনাদের বলশেভিক তাবুর নিচে আমরা শবাই মেনশেভিক; এখন দেখা জাইতেছে, বলশেভিক না, মেনশেভিকই বড়ো, শারা দেশ তাগো দখলে, এতো পাওয়ারফুল মেনশেভিকের দেশে বলশেভিক বিপ্লব কেমনে হবে!?
ওদিকে, রাশিয়া এবং চায়নার দুই বিপ্লবই কিন্তু দুইটা ওয়ার্ল্ড-ওয়ারের জামানার ঘটনা, সেই মওকাওতো আপনাদের নাই!
সবচে বড়ো কথা, রেড আর্মি কই!? রাষ্ট্র গঠন আলবত একটা গায়ের জোরের ঘটনা। দুই পক্ষ দড়ি টানাটানি কইরা এক পক্ষ জিতবে। নিজেই কিন্তু রিয়ালিস্ট এসেসমেন্ট করতে পারেন একটা। দড়ি টানাটানি কইরা পারবেন? কতোটা পারবেন আপনারা, সেই এসেসমেন্ট চুপ্পুরে খেদাবার মুভমেন্টেই বুঝতে পারার কথা আপনাদের!
রিয়ালিস্ট হইয়া এইবার বরং বিপ্লবি প্রসেসের লম্বা এস্ট্রাগল শুরু করা দরকার আপনাদের! জনতারে রেডি করতে হবে, পলিটিকেল সফরের ভিতর দিয়া পৌছাইতে হবে মঞ্জিলে।
তাইলে আমাদের ভাবা দরকার, রিয়ালিস্ট হইয়া আপোষহীন তরিকার বিপ্লবী প্রসেসটা কেমন হইতে পারে?
ঐ যে, জুলাই ফরমান আর চার্টার ডিনাই করা; বদলে আপনাদের বিপ্লবী বাসনা আর খোয়াব জনতার দরবারে হাজির করা, আপনাদের খোয়াব যেন জনতার কালেকটিভ খোয়াব হইয়া ওঠে, সেই মর্মে কাজ করা।
আগে বহুবার কইছি আমি, ইলেকশন হইলো দেশের একমাত্র জেনারেল মচ্ছব/ফেস্টিভ্যাল, সকল ধর্ম-জাতি-লিংগের, সকল বয়শের। জুলাই বিপ্লবের বাসনা আর আপনাদের খোয়াব একদম শব্দে-শব্দে লেখেন, বলেন, ইলেকশনে আপনাদের ইশতেহার হিসাবে পেশ করেন, ভোট চান নাগরিকদের।
বিয়ালিস্ট বিপ্লবী মানে হইলো, বিপ্লবী বাসনা আর খোয়াবের লগে লগে অলোয়েজ একটা ‘প্লান বি’ রাখা। এই ব্যাপারে আপনাদের সুবিধা বাস্তবে অনেক বেশি আসলে! কেননা, মার্ক্সিস্ট বিপ্লবের প্লান বি'র নাম সোশাল ডেমোক্রেসি। আর যদ্দুর আন্দাজ করি, আপনাদের খোয়াবের বিপ্লব মানে ‘সোশাল ডেমোক্রেসি’ কায়েম করা; বা বাংলাদেশটারে একটা ‘ওয়েলফেয়ার এস্টেট’ বানাইতে চান আপনারা।
ফলে ইলেক্টোরাল প্রসেসের ভিতর দিয়া আপনাদের বিপ্লবের দিকে আগানো বেশ শম্ভব আশলে। ওদিকে, দেশের ইলেক্টোরাল পোছেছের ভিতর জেই গলদ, হাসিনা পালাবার পরেও, শেইটা আপনারা অলরেডি বুঝতে পারেন, কন্সটিটুশনাল ঝামেলা বুঝতে পারেন, কিন্তু নেক্সট ইলেকশন এবং তার পরের শরকারের ফেইলুরই আপনাদের মওকা বানাইয়া দেবে, ঐ গলদ আর ঝামেলা দেশের জনতারে আরো ভালো কইরা বুঝাইতে পারবেন ইলেকশনের পরে!
কন্সটিটুয়েন্ট এছেম্বলি রাখতে পারেন ইশতেহারে, খমতার ডিছেন্ট্রালাইজেশন (জেমন ধরেন, লোকাল গভমেন্টের আন্ডারে পুলিশ রাখা।) বা পাবলিক ছার্ভিছ বলতে ঠিক কি বোঝেন আপনারা--এইগুলা কিলিয়ার কাট বলেন [দুইজনের লগে ঐদিন আলাপে আমাদের মনে হইলো, শকল পাবলিক হাশপাতালে প্যারাছিটামল, এন্টাছিড, ছ্যালাইন--এমন দুই চারটা মেডিছিন এভেইলেবল রাখা, ডাক্তার এনশিওর করা, শকল এক্সরে মেশিন চালু রাখার কছম খাওয়া–এমন কইরা কিলিয়ার কথায় আপনাদের বাশনা জানানো।]।
সো, ‘পেলান বি’ লইয়া ভাবেন প্লিজ। সেইটাও বিপ্লব এবং আপোষহীন থাকাই। গনপরিষদ হবে না, পারবেন না। চুপ্পু ইস্যুর মতোই ধরা খাইবেন। দেশের জনগনের সবচেয়ে মস্ত ফেস্টিভ্যাল ঠেকাবার ফন্দি-ফিকির কইরা জনগনের কাছে ভিলেন হইয়া উঠবেন না। এবং আপনারা চাইলেও ইলেকশন ঠেকাইতে পারবেন না, বরং নিজেরাই ইরেলেভেন্ট হইয়া যাইবেন!
বরং ইলেকশন করেন। লোকালি পাওয়ারফুল লোকজনেরে নমিনেশন দেন। পার্টিতে চান্দা নেন; লগে শর্ত রাখেন যে, আপনাদের ভিতরের বিপ্লবী বাসনা থাকা কাউকে ইলেক্টোরাল কনসালটেন্ট রাখতে হবে। এই ফর্মুলায় লোকালে পাঠান সেন্টারের লোকজনেরে, তাদের কানেকশন হোক, লোকাল পলিটিক্স বুঝুক, লিডার হইয়া উঠুক; এমপ্লয়মেন্টও হোক; ২৫ বছরে এমপি হওয়া অতো জরুরি না। বরং স্ট্রং ডকুমেন্টেশন করেন, পার্টির পলিটিকেল গোল ক্লিয়ার করেন। কর্মীদের পলিটিকেল টেনিং দেন। নমিনেশন জারে দেবেন, তাদের লগে দফায় দফায় মিটিং করেন। পার্টির পলিটিকাল মঞ্জিলের ব্যাপারে ক্লিয়ার আইডিয়া ঢুকান তাদের ভিতর। পারলে দুইটা টিভিতে পার্টির এফিলিয়েটেড টকশো হোস্ট জোগাড় করেন। টকশো করেন, মিডিয়া বানান, নাটক-সিনেমা বানান, জনতারে রেডি করেন। বাসনা আর খোয়াবের কনসিসটেন্সি থাকলে বিপ্লব হবেই। নাগরিকদের হকের পক্ষে থাকেন, জনতা রেসপন্ড করবে। চোখা নজরে বিচার করলে দেখবেন, দুনিয়া চলে ‘প্লান বি’ মোতাবেক, ‘প্লান এ’ প্রায়ই স্রেফ ইউটোপিয়া! এবং ইউটোপিয়া হইলেও দরকারি, ইউটোপিয়া না থাকলে মানুষ ‘প্লান সি'তেই আটকাইয়া থাকে…
১৭আগস্ট২০২৫
বয়ান সম্পাদকঃ লেখকের নিজস্ব বানানরীতি ঈষৎ পরিবর্তন করা হয়েছে