ডাকসু নির্বাচন কি জাতীয় রাজনীতির পাওয়ার প্লে?
মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া, স্নাতক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছে, ডিসেম্বরে যারা নির্বাচন চেয়েছিল তারা এখন আর নির্বাচন চাচ্ছে না। আসিফ এই সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা। রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই তিনি জানবেন এটাই স্বাভাবিক। সরাসরি অনেক কিছু বলতে না পারলেও আসিফ, মাহফুজরা আকার ইঙ্গিতে অনেক কিছু বলে প্রায়ই সতর্ক করার চেষ্টা করেন।
আপনারা জানেন পুরোনো এস্টাবলিশমেন্ট, দিল্লি আর পতিত স্বৈরাচার আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে চায় যতক্ষণ না পর্যন্ত এই নির্বাচনে পতিত লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হয়।
১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত সংবিধানের ১৩ তম সংশোধনীর মাধ্যমে এদেশে একটি নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। ২০১১ সালে হাসিনা যেটা আদালতের রায়ে বাতিল করায়। গত কয়েকদিন ধরে সেটা দ্রুত পুনর্বহাল করার জন্য দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছে একটা মহল।
ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর দিল্লি পন্থী একটা গ্রুপ এবং কয়েকজন টকশোবিদ ইদানিং খেয়াল করবেন যে, তারা ইউনুস সরকারের পরিবর্তে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য ন্যারেটিভ দিচ্ছে। তাদের এই ন্যারেটিভ প্রচার আর ১৩ তম সংশোধনী এখনি রিস্টোর করার দৌড়ঝাঁপ একই সূত্রে গাঁথা।
ইউনূস সরকারের অধীনে নির্বাচন না করে একটা তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন করার ন্যারেটিভটা তৈরি করা হচ্ছিল আরও দুই মাস আগে থেকেই। এখানে গবেষণার নামে, অনলাইন জরিপের নামে, কথিত বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে যা কিছুই প্রমোট করা হোক না কেন আপনাকে বুঝতে হবে এগুলো গ্রান্ড ডিজাইনের অংশ।
মনে আছে কয়েকদিন আগে দুইটা রিপোর্ট করানো হয়েছিল যে, ইউনূস সরকারের সেইফ এক্সিট খুঁজতে হবে এই শিরোনামে? যেটা করানো হয়েছিল দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মাধ্যমে। আরেকটা টিআইবি প্রধান ইফতেখারুজ্জামানের মাধ্যমে। তিনি বলেছিলেন এনসিপি হচ্ছে ইন্টেরিম সরকারের রাজনৈতিক দল। অর্থাৎ এই সরকার নিরপেক্ষ না, তাই তাদের সরিয়ে একটা তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সেই তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করাতে চায় পুরোনো এস্টাবলিশমেন্ট আর দিল্লি।
ইউনূসের অধীনে আওয়ামী লীগ বিহীন একটা নির্বাচন হয়ে যাওয়া মানে আওয়ামী লীগের এক পা কবরে চলে যাওয়ার শামিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে-অনলাইনে সক্রিয়, তারা উজ্জীবিত। কারণ তাদেরকে মোটিভেট রাখা হয়েছে এই বলে যে, ইউনুস বিদায় হলেই লীগকে ব্যাক করানো হবে। এখন আওয়ামী বিহীন একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়ে গেলে, পাঁচ বছরের জন্য একটা স্ট্রং সরকার চলে আসলে মাঠ পর্যায়ের তাদের সকল নেতাকর্মী সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।
তাই ইউনুসের অধীনে নির্বাচন না করে, একটা এস্টাবলিশমেন্ট ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার তোড়জোড় চলছে। গত কয়েকদিনের টকশোগুলো খেয়াল করিয়েন। এই ন্যারেটিভ ছড়ানো শুরু হয়েছে অলরেডি। ১৩ তম সংশোধনী নিয়েও সক্রিয় হয়েছে একটা মহল।
দ্বিতীয়ত, ডাকসুতে শীর্ষ পদে কে বা কারা জয়ী হতে যাচ্ছে এটার গোয়েন্দা তথ্য তৈরি হয়েছে কয়েকদিন আগেই। এই মূহুর্তে বিএনপি ও ছাত্রদল প্রধান আওয়ামী বিরোধী শক্তি। এখন ছাত্রদলের বাহিরে বাগছাস ও শিবির থেকে ভিপি, জিএস, এজিএস হওয়া মানে দ্বিতীয় আরেকটা বৃহৎ শক্তি দাঁড়িয়ে যাওয়া। বাংলাদেশে আওয়ামী বিরোধী দুইটা বৃহৎ শক্তি দাঁড়িয়ে যাওয়া মানে আওয়ামী লীগের ফেরত আসা অসম্ভব হয়ে যাওয়া।
তাই ডাকসু নির্বাচন বানচাল করতে অথবা যদি নির্বাচন হয়েও যায় তাহলে ফলাফল মেনুপুলেট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বলবো ক্যাম্পাসে সতর্ক থাকতে। ডাকসুতে কাদের-বাকের/সাদিক-ফরহাদরা চলে আসা মানে এদেশে দিল্লি বিরোধী শক্তি প্রভাবশালী হওয়া। একটা দ্বিতীয় বিকল্প তৈরি হওয়া। পতিত শক্তি, দিল্লি, পুরোনো এস্টাবলিশমেন্ট একারণেই চাচ্ছে না ছাত্রদলের বাহিরে দ্বিতীয় বৃহত্তম আরেকটা শক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি হোক। তারা এখানে আওয়ামী লীগের ভ্যাকিয়ুমটা ধরে রাখতে চায়। সম্প্রতি পতিত লীগ, তাদের দ্বারা পেট্রোনাইজড কথিত বুদ্ধিজীবী, লেখক দাবী করা অনেকের পোস্টগুলো খেয়াল করিয়েন। ডাকসু নিয়ে তাদের প্রচারণাগুলো দেখিয়েন। তারা কাকে প্রমোট করছে, কাকে ভোট দেওয়ার জন্য বলছে এগুলো নজরে রাখিয়েন।অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।
ছাত্রলীগ বিহীন এই ডাকসু নির্বাচন যেভাবেই হোক সফল করতেই হবে। ছাত্রলীগের বিকল্প শক্তির উত্থান ঢাবিতে লাগবেই। এদেশে দিল্লির আধিপত্যবাদ বিরোধী বিকল্প শক্তি লাগবেই। তা না হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ফিরবেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো ডাকসুর শীর্ষ তিন পদে কোন অরাজনৈতিক ব্যাক্তিকে ভোট না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেই শক্তিশালী করুন। তাতে বিকল্প তৈরি হবে। আর ইউনুসের অধীনেই কতো দ্রুত একটা জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা যায় সেদিকে নজর রাখুন।
আসন্ন ডাকসু কেবল একটা নির্বাচনই না। এটা স্থায়ীভাবে পতিত ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করার নির্বাচন। আশাকরি ঢাবি অতীতের ন্যায় এবারও এদেশের মানুষকে পথ দেখাবে।