বিএনপির ৩১ দফা: প্রশ্নবিদ্ধ সদিচ্ছা ও পরিকল্পনাবিহীন আকাঙ্ক্ষা
ইশতিয়াক আকিব
শিরোনামে যেমন বলা, এই ৩১ দফার বিষয়ে আমার তিনটি প্রধান সমালোচনা। অধিকাংশ দফাতেই এর এক বা একাধিক খুজে পাবেন। তাই আগে এই তিনটি সমালোচনার ব্যাখ্যা করি।
সমালোচনা ১. সেকেলে: ৩১ দফা পড়া শুরু করলেই দুইটা জিনিস সবার আগে চোখে পড়বে। এক, পুরাটা সাধু ভাষায় লেখা এবং দুই, হাসিনা থাকাকালীন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা (২০২৩ এর জুলাই)। ভূমিকাতে বলা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপি জেতার পরে জাতীয় সরকার গঠন করে এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে - সেই নির্বাচন হাসিনা দিতো? ২৪ এ ছাত্র জনতার সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে হাসিনার পতনের পরেও বিএনপির মনে হয় নি যে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এই পলিসি প্লাটফর্মে বা নিদেনপক্ষে ভূমিকাতেও কোনো প্রকারের পরিবর্তনের দরকার আছে। ৩১ দফার বেশ কিছু দফা হলো সংস্কার কমিশন গঠন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো অনেকগুলো কমিশন গঠন করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে কি আবার নতুন করে কমিশন করবে?
সমালোচনা ২. প্রশ্নবিদ্ধ সদিচ্ছা: ভূমিকাতেই বলা হয়েছে জাতীয় সরকার গঠনের কথা। অনেকগুলো দফাতে আছে সংস্কার কমিশনের কথা। জুলাই বিপ্লবের পরে তারেক রহমানকে ছাত্র নেতৃত্ব প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাতীয় সরকার গঠনের - তিনি মানেন নি। সাতজনের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তিন মাসে নির্বাচন চেয়েছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রস্তাবিত অনেক কমিশন গঠন করেছেন - সেসব কমিশনের প্রায় সব বড় বড় প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করছে বিএনপি। মনমতো না হলে যদি কমিশনের প্রস্তাব না নেয়া হয় কমিশন করেই কী লাভ? একই কাজ কি বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হবে না? অবশ্যই কমিশনের সবকিছু বেদবাক্য হিসেবে মানা লাগবে এমন কথা নাই। কিন্তু বড় বড় প্রস্তাবনাতেই বাধা দিলে সদিচ্ছার প্রশ্ন চলে আসে। এমনকি সংস্কার কমিশনে বিএনপি সরাসরি তাদের নবম দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সমালোচনা ৩. পরিকল্পনাবিহীন আকাঙ্খা: অনেকগুলো পয়েন্ট কেবল শুনতেই ভালো শুনায় এবং সবাই মেনে নিবে। কিন্তু সেটা কীভাবে অর্জন হবে তার কোনো বিস্তারিত নেই। অনেকটা এমন বলা: “দেশের ভালো চাই” - সবাইই তো ভালো চায়। সেটা অর্জন করতে পরিবর্তনটা করবেন কী? অনেক জায়গাতেই ছোট বেলার রচনা প্যারাগ্রাফের মতো ‘The government should take necessary steps - সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে’ লেখা।
এখন দফা ধরে ধরে আগানো যাক। প্রতি দফার ‘বিস্তারিত’ ওয়েবসাইট থেকে নেয়া। নিচে কেবল শিরোনাম উল্লেখ করলাম।
১. সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন
- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশন আছে, বিএনপি কি আবার আরেকটা বানাবে (সমালোচনা ১)? আর এই কমিশনের প্রায় সব বড় প্রস্তাবে বিএনপি দ্বিমত (সমালোচনা ২)।
২. সম্প্রীতিমূলক সমন্বিত রাষ্ট্রসত্তা (Rainbow Nation) প্রতিষ্ঠা ও “National Reconciliation Commission” (জাতীয় সমন্বয় কমিশন) গঠন
- রেইনবো নেশনের প্রস্তাবনার বিস্তারিত কোনো পলিসি নেই (সমালোচনা ৩); সংস্কার কমিশন থেকে সংবিধানে প্লুরালিজম যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যা বিএনপি মানে নি। বর্তমানে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের নানা সংস্কার প্রস্তাবে ও কার্যপদ্ধতিতে (যেমন এমসিকিউর উত্তর পাবলিক করে দেয়া) বিএনপির দ্বিমত (সমালোচনা ২)।
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন
- সমালোচনা নাই, সবাইই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে মোটামুটি একমত
৪. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা
- সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় কিছু স্বাধীন ব্যুরোক্রেসি তৈরি করার কথা ছিলো যার বিরোধিতা করেছে বিএনপি। তবে হতে পারে এসব ক্ষেত্রে সংসদের বা নির্বাহী বিভাগের কতৃত্ব থাকাটা তাদের কাঙ্খিত ভারসাম্যের অংশ - তেমন হলে অন্তত তার বিস্তারিত নেই। সংস্কার কমিশনকে বিএনপি জানিয়েছিলো তারা প্রধানমন্ত্রীর কোনো ক্ষমতাই খর্ব করতে রাজি না। নিউজ কমেন্টে দিচ্ছি। সংস্কার কমিশনের একটা বড় সময় ব্যয় হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন ক্ষমতা হ্রাসে বিএনপিকে বাধ্য করতে।
৫. প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময়সীমা নির্ধারণ: পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন না।
- দুই টার্মের পরে দলীয় অনুগত কাউকে এক সপ্তাহের জন্য প্রধানমন্ত্রী বানালে এক সপ্তাহ পরে কি পুরনো জন আবার প্রায় পূর্ণ টার্ম প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? অথবা রাশিয়ার মতো প্রধানমন্ত্রী - রাষ্ট্রপতি পালাবদল।
শুরুতে সবাই মোট দুই টার্ম ভাবলেও সংস্কার কমিশনে বিএনপি বলে আসে যে দুই টার্মের পরে বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে। এই নিয়ে অনেক সময় ব্যয় হবার পরে অবশেষে মোট দুই মেয়াদ মেনে নেয়।
৬. আইন সভায় উচ্চকক্ষের প্রবর্তন
- উচ্চকক্ষে বিশিষ্ট নাগরিক ও এক্সপার্টদের নিয়োগ দেয়া হবে এটা ছাড়া কোনো বিস্তারিত নাই - যেমন কতজন, কে নিয়োগ দিবে, নিম্নকক্ষের তুলনায় ক্ষমতা কেমন হবে, এক্সপার্ট নিয়োগ হচ্ছে কি না সেটা কে চেক করবে এমন কোনো বিস্তারিত নাই (সমালোচনা ৩)। উচ্চকক্ষের সিট সাধারণ নির্বাচনের ভোটের অনুপাতে বন্টনের বিষয়ে অন্য প্রায় সবাই, সংস্কার কমিশন এমনকি অধিকাংশ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী একমত হলেও বিএনপি এখনো উচ্চকক্ষকে নিম্নকক্ষের সিটের অনুপাতে বন্টন করতে চায় এবং জুলাই সনদে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছে। নিম্নকক্ষের অনুপাতে উচ্চকক্ষ হওয়া আর না হওয়ার কোনো পার্থক্য নেই। তাছাড়া নির্বাচনের পরে উচ্চকক্ষের সিট বিতরণ সংরক্ষিত নারী আসনের মতো ব্যবসা ও দলের মধ্যকার বার্গেইনিং চিপে পরিণত হবে। (সমালোচনা ২)
৭. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন: আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এমন সব বিষয় ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করিবার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে বিবেচনা করা হইবে।
- ব্যক্তিগতভাবে আমার অভিমত ৭০ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের একটা সাংবিধানিক কলঙ্ক। সেই বহুল সমালোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা যাবে কি না তা পরীক্ষা নিরীক্ষা সাপেক্ষে বিবেচনা করবে। সেই পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে আবার আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ভোট বাদ দিয়ে করতে হবে। সব জিনিসই চাইলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বানানো যায় - পদ্মাসেতুও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আবার আইসিটি অ্যাক্টও। এটা ঠিক করবে কে? সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা? সংবিধান সংস্কার কমিশন কেবল অর্থবিল বাদে সবভোট ফ্রি করে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো। বিএনপি মানে নি। ঐক্যমত্য কমিশনে বিএনপিরকে মানানোর জন্য অনেক সময় ব্যয় করার পরে অবশেষে ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে ঐক্যমত্য এসেছে।
৮. নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সংশোধন
- এই দফায় বলা হয়েছে সবার অভিমত নেয়া হবে, কিন্তু বিএনপি বর্তমান সংস্কার কমিশনের বড় বড় প্রস্তাবের বিরুদ্ধে (সমালোচনা ২)। তবে এই দফায় প্রশংসনীয় পরিমানে বিস্তারিতভাবে কিছু পলিসির কথা আছে। এখন তো নির্বাচন সংস্কার কমিশন হয়ে গেলো। সেক্ষেত্রে এই দফার কার্যকরতা কী? (সমালোচনা ২)
৯. স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন
- এই দফাতে সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষমতা সংসদীয় কমিটির কাছে দেয়ার কথা বলা। কিন্তু ঐক্যমত্য কমিশনে এসে বিএনপি সরাসরি বিরোধিতা করে সব নিয়োগ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাখতে যেয়েছে। এনসিসি প্রশ্নে এবং কোন কোন পদে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনায় সময় নষ্ট হয়েছে। অবশেষে বেশ কিছু পদেই নিয়োগের ক্ষমতা বিএনপির বাধার কারণেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাখা হচ্ছে। তাই বিএনপির প্রশ্নবিদ্ধ্ব সদিচ্ছার সবথেকে বড় প্রমাণ থেকে যায় এই দফাটি।
১০. জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃপ্রবর্তন ও সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগ আইন প্রণয়ন
- এই পয়েন্টে অনেক বিস্তারিত আছে এবং বর্তমান জুডিশিয়াল কমিশনের প্রায় সব প্রস্তাবেই বিএনপি একমত। সেক্ষেত্রে বর্তমানে এই দফার যৌক্তিকতা কী? (সমালোচনা ১)
১১. প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন
- বর্তমান সংস্কার কমিশনের প্রশাসন সম্পর্কিত প্রায় অর্ধেক মতো প্রস্তাব বিএনপি মেনেছে। বাকিগুলোতে মতামত দিয়েছে। বড় কোনো দ্বিমত নেই। সেক্ষেত্রে এই দফার এখন আর কাজ কী? (সমালোচনা ১)
১২. মিডিয়া কমিশন গঠন:
- মিডিয়া সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বিষয়ে বিএনপির কোনো বড় দ্বিমত নেই। তাহলে এই দফার এখন গুরুত্ব কী? (সমালোচনা ১)
১৩. দুর্নীতি প্রতিরোধে দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ন্যায়পাল নিয়োগ:
- সমালোচনা নাই, এগুলো সর্বজনস্বীকৃত কথা। তবে উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিএনপি তাদের ইশতেহারে ন্যায়পাল নিয়োগের কথা বলেছিল, কিন্ত করে নি।
১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা:
- সমালোচনা নাই, এগুলো সর্বজনস্বীকৃত কথা।
১৫. অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন
- বর্তমানে কমিশন আছে, বিএনপির কোনো বড় দ্বিমত খুজে পাই নাই - সমালোচনা ১। কিছু পলিসি ডিটেলস থাকলে ভালো হতো।
১৬. ধর্মীয় স্বাধীনতার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা প্রদান
- সর্বজনস্বীকৃত কথা বার্তা। কোনো পলিসি চেঞ্জ নাই, কেবল সুষ্ঠু প্রয়োগের কথা। এই কথা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, এনসিপি, জামাত সবাইই বলবে।
১৭. মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় শ্রমের ন্যায্য মজুরী নিশ্চিত করা
- মজুরি নিশ্চিতের এক্সাক্ট পলিসি উল্লেখ করা হয়েছে যা প্রশংসনীয়। অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণের বিশেষ কর্মসূচিগুলা কী বলা হয় নাই।
১৮. শিল্প, বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানী খাত আধুনিকায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা
- সমালোচনা নাই। বিনিয়োগ বান্ধব নীতির উদাহরণ থাকলে ভালো হইতো।
১৯. জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করিয়া বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন
- এই কথা বিএনপি, এনসিপি, জামাত সবাইই বলবে। প্রধান কোনো কূটনৈতিক ইস্যু যেমন রোহিঙ্গা, সীমান্ত হত্যা, আন্তর্জাতিক নদীর পানি বন্টন, বৈদেশিক শ্রমবাজার কিছুরই উল্লেখ নাই - উল্লেখ থাকলে বুঝতে পারতাম এগুলা অগ্রাধিকার (সমালোচনা ৩)। অথচ আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনেকগুলো লাইন আছে। বোঝা যাচ্ছে এই দফার টেক্সট আসলে বিদেশীদের খুশি করতে লেখা, কোনো সিরিয়াস পলিসি ডকুমেন্ট হিসেবে লেখা না।
২০. প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিকায়নসহ সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা
- এই কথা বিএনপি, এনসিপি, জামাত সবাইই বলবে। আধুনিকায়ন বলতে কী পরিবর্তন করা হবে বিস্তারিত নাই (সমালোচনা ৩)।
২১. বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলি স্বশাসিত ও ক্ষমতাবান করা
- স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ব্যাপক পরিবর্তন সুপারিশ করেছে। এ নিয়ে বিএনপির কোনো প্রতিক্রিয়া খুজে পাই নাই। তাদের একমাত্র স্টান্স হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে হতে পারবে না। তাহলে কি তারা বাকি সব প্রস্তাবনার পক্ষে? (সমালোচনা ১) এই দফায় দেয়া একমাত্র পলিসি পজিশন হলো নির্বাহী আদেশে সাস্পেনশন আটকানো। আর কোনো ডিটেলস নাই (সমালোচনা ৩)।
২২. শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান
- সমালোচনা নাই। সব পার্টিরই একই স্টান্স।
২৩. আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন
- বেকার ভাতা ও চাকরীর বয়স বৃদ্ধি বাদে ডিটেলস নাই। বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা মোটামুটি ২৫ লাখের আশেপাশে থাকে। বেকার ভাতার আনুমানিক পরিমান কতো হবে? বাংলাদেশে ন্যুনতম মাসিক ফুলটাইম মজুরী ১২৫০০ টাকা। যদি বেকারদের ৩০০০ টাকা করেও দেন বছরে ৯০০০ কোটি টাকা লাগবে। বয়স্ক ভাতার মতো মাসে ৬০০ টাকা করে দিলে বছরে ১৮০০ কোটি টাকা লাগবে।
২৪. নারীর মর্যাদা, সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ
- জেনেরিক কথাবার্তা। কোনো নির্দিষ্ট পলিসি বা বিস্তারিত নাই (সমালোচনা ৩)। সংসদে মনোনয়নে নারীদের প্রাধান্যের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রমাণ হয়ে যাবে বিএনপির ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হলে। প্রায় সবাই ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি ভোটের পক্ষে থাকলেও বিএনপির তীব্র বাধায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অথচ এটি বিএনপির ২০০১ এর ইশতেহারে ছিলো (সমালোচনা ২)
২৫. চাহিদা ও জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়িয়া তোলা
- জিডিপির ৫% কমিট করা প্রশংসনীয়। এছাড়া কোনো স্পেসিফিক পলিসির উল্লেখ নাই। যেমন জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভবিষ্যৎ কী? সাথে ইন্টারনেটের যুগে এখনো অনৈতিক আকাশ সংস্কৃতির কথা হাস্যকর।
২৬. “সবার জন্য স্বাস্থ্য” এই নীতির বাস্তবায়ন করা
- জিডিপির ৫% কমিট ও NHS এর উল্লেখ করা প্রশংসনীয়। NHS এ প্রায় সব হাসপাতাল, ডাক্তার ও ওষুধ রাষ্ট্রের অধীনে। বাংলাদেশের বেসরকারী খাত থেকে চিকিৎসাখাতকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্তকরণের জন্য কি সরকার প্রস্তুত?
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুই খাতেই জিডিপির ৫% করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার বাজেট ১২% (জিডিপির ১.৮%) আর স্বাস্থ্যে ৫% (জিডিপির ০.৮% মতো)। দুই খাতেই জিডিপির ৫% কমিটমেন্টে জাতীয় বাজেটের পরিমাণ বাড়বে প্রায় ৫০% মতো - অর্থাৎ আট লাখ কোটি টাকার বাজেট হবে বারো লাখ কোটি টাকা। প্রতি বছরে এই চার লাখ কোটি করে টাকা কোথা থেকে আসবে তার কোনো পরিকল্পনা বলা নেই। উল্লেখ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মিলে বিএনপি জিডিপির ১০% ব্যয় করতে চায় যেখানে বাংলাদেশের সরকারের ট্যাক্সই উঠে জিডিপির মাত্র ৭.৫%
২৭. কৃষকের উৎপাদন ও বিপণন সুরক্ষা প্রদানসহ কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা
- মোটের উপর জেনেরিক কথা। এনসিপি জামাতও একই কথা বলবে।
২৮. সড়ক, রেল, নৌ পথের আধুনিকায়ন ও বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা
- জেনেরিক কথাবার্তা। কোনো প্রজেক্টের উল্লেখ নাই, কোনো পলিসি পজিশন নাই (সমালোচনা ৩)।
২৯. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ এবং নদী শাসন ও খাল খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা
- খাল খনন আর নদী শাসন বাদে কোনো পলিসি ডিটেলস নাই, বাকিসব জেনেরিক (সমালোচনা ৩)
৩০. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং আণবিক শক্তির উন্নয়ন ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা
- বিএনপির কারো কাছে এই তথ্যটা পৌছায় নাই যে molecule এর বাংলা অনু আর atom এর বাংলা পরমানু? সায়েন্সের কোনো লোক কি নাই বিএনপিতে? এতে প্রমাণ হয় এই ৩১ দফা লেখার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ (subject matter expert) দের যুক্ত করা হয় নি। বলা আছে, IT এর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে - সেগুলা কী? মহাকাশ গবেষণা ও পরমানু শক্তি কমিশনে কী সুযোগ সমৃদ্ধ হবে? ডিটেলস নাই (সমালোচনা ৩)। একটা প্রজেক্টের নাম পর্যন্ত নাই।
৩১. যুগোপযোগী, পরিকল্পিত, পরিবেশ বান্ধব আবাসন এবং নগরায়ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
- আবার সেই ডিটেলস ছাড়া ইচ্ছা (সমালোচনা ৩)
সর্বোপরি, ৩১ দফার একটি বাস্তবসম্মত এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে আপডেট দরকার। আশা করি, দ্রুতই বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের পলিসি পজিশনের বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।



