ক্ষমতার সমঝোতা না জনতার লড়াই?
আজওয়াদ হায়দার
বাজারে জোর গুঞ্জন, এনসিপি এবং বিএনপির আসন-সমঝোতার আলোচনা চলছে। শুধু গুঞ্জন বললেও কম বলা হবে। বেশ কয়েকজন এনসিপি নেতা গণমাধ্যমেও বলেছেন যে তাঁরা বিএনপির সঙ্গে জোটের ব্যাপারে উৎসাহী নন, তবে কিছু আসনে সমঝোতার আলাপ হয়েছে। এর সঙ্গে আরও আছে কিছু কিছু আসনে ভাগাভাগি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন নেতা-কর্মীর আলোচনা ও অভিযোগ। সুতরাং, এই পথে হাঁটাকে একটি সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে এনসিপি, এটা ধরে নিয়েই পরবর্তী আলোচনা করছি।
সমঝোতার সহজ অর্থ হলো, বিএনপি কিছু জায়গায় নিজেদের প্রার্থী দেবে না, যাতে এনসিপি সেইসব জায়গায় তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে পারে। শুভঙ্করের ফাঁকিটা হলো, আইনসভায় যারা বসবেন, তাঁদের পরিচয় ‘জনগণের প্রতিনিধি’; এটাই তাঁদের প্রথম এবং একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়।
বিএনপি বা এনসিপির প্রার্থীতার চেয়ে এই পরিচয় বহুগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, এই সমঝোতার আলোচনায় জনগণ অনুপস্থিত, অনুপস্থিত তাঁদের দলের কর্মী, সমর্থকের চিন্তা, ভাবনা ও মতামত। তাহলে একে কীসের রাজনীতি বলা যাবে? জনতার, না ক্ষমতার?
অনেকে অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন যে, এনসিপি অন্তত কয়েকটি আসনে জয়ী হতে না পারলে এই দল টেকানোই কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং কিছু আসনে সমঝোতার মাধ্যমে রাজনীতিটা দাঁড় করানোর সুযোগ নেওয়া দরকার। এই মনোভাব যারা পোষণ করেন, তাঁদের বাস্তববাদিতাকে আমি প্রশংসা করি। কিন্তু তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, রাজনীতি বা দল আসনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে দাঁড়ায় না; দাঁড়ায় জনগণের পক্ষে রাজনীতি করছে কি না, এই প্রশ্নে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
এইরকম সমঝোতায় এনসিপিকে নিয়ে সেই দৃষ্টিভঙ্গি তলানিতে গিয়ে ঠেকবে বলেই আমার ধারণা। এর সঙ্গে এটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যারা এনসিপিকে নতুন রাজনীতির একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখতে চান, এবং পুরোনো প্রভাবশালী মহলের হাতে কুক্ষিগত ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কল্পনা করেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্তে রাজনীতি ও দেশ নিয়ে ভাবনায় চরমভাবে নিরাশ হবেন।
শুনতে বৈপ্লবিক শোনালেও ইতিহাস বলে—ক্ষমতার সঙ্গে সমঝোতা বা আঁতাত করে কোনো দল বা রাজনীতি টিকে থাকে না। বরং যারা ক্ষমতার বিরুদ্ধে গিয়ে জনতার পাশে দাঁড়ায়, তাদের অবস্থানই শেষ পর্যন্ত শক্ত হয়। যেই “রাজনৈতিক বাস্তবতা”-র কথা আমার এই বন্ধুরা বলছেন, সেটা হলো দলীয় স্বার্থের বাস্তবতা, কতিপয়ের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবতা, ক্ষমতার ভাগিদার হওয়ার কামনার বাস্তবতা; জনগণের স্বার্থের বাস্তবতা নয়! গণবিচ্ছিন্ন ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার এই কৌশলগত রাজনীতিতে আপনাদের বা বাংলাদেশের আপামর জনগণের কোনো কল্যাণ নিহিত নেই।
আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, বাংলাদেশের মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও নতুন এক দিনের স্বপ্নকে ক্ষমতার সমঝোতার বলি দেবেন না। “সমঝোতা, কিন্তু জোট নয়”—এই কথার মাধ্যমে জনগণের বুদ্ধিমত্তাকে ভয়াবহভাবে অপমান করবেন না।
ক্ষমতার উঁচু চেয়ারের সমঝোতার আলোচনার টেবিল থেকে নেমে এসে জনগণের লড়াইয়ে শামিল হোন। পথ হয়তো অনেক বন্ধুর হবে, অন্যায়-অবিচার, জুলুমও সহ্য করতে হবে; কিন্তু এই পথই নতুন বাংলাদেশের পথ, এই পথই জনতার পথ।
ক্ষমতা নয়—জনতা!




