কিছুদিন আগেই ঐক্যমত কমিশন প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের হাতে জুলাই সনদ তুলে দিয়েছিল। দলগুলোও নিজেদের মতামত কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে। সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশনের তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৫ আগস্টের পর। কিন্তু সেই আলোচনাই এখন শোনা যায়নি। শোনা গেছে, কমিশন বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছে। দলগুলোও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের প্রস্তাব দিয়েছে—কেউ গণপরিষদ, কেউ সংবিধান সংস্কার সভা, কেউ গণভোট, কেউ অধ্যাদেশ কিংবা এলএফও-এর মতো ব্যবস্থার কথা বলেছে। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই হঠাৎ পুরনো আইনের ভিত্তিতেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলো। ফলে ঐক্যমত কমিশনের তৃতীয় দফার বৈঠককে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বহীন করে দেওয়া হলো। একটি বিশেষ দলের চাপে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ইন্টেরিমের দ্বিচারিতার প্রকাশ পেল।
ফলে ধীরে ধীরে, জুলাই সনদকেও বানিয়ে ফেলা হচ্ছে নব্বইয়ের তিন জোটের রূপরেখার মতো—কাগজে থাকবে, কিন্তু কাজে আসবে না। আরো একবার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ থমকে দেওয়া হচ্ছে।
আসলে এই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে করার মতো তেমন কোন ক্ষমতা নেই। দুর্বল ও পরনির্ভরশীল এই সরকারের একটাই দায়িত্ব ছিল—বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি নতুন ট্রিটি তৈরি করা, এবং সেই ট্রিটির আইনি ভিত্তি দেওয়া। তাহলেই আমরা হয়তো আমাদের ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্র হিসেবে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে হাঁটা শুরু করতাম। কিন্তু তা না করে, স্থিতিশীলতার নামে আবারও পুরোনো খেলাই শুরু করা হলো।
অনেকেই বলেন, আমরা নাকি নির্বাচনবিরোধী। এটা একেবারেই মিথ্যা। আমরা শুধু চাই, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক। তার ভিত্তিতেই প্রয়োজন হলে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে নির্বাচন হোক—আমাদের তাতে আপত্তি নেই।
কিন্তু পুরোনো নিয়মের খেলায় নতুন খেলোয়াড় হতে আমরা রাজি নই। নতুন নিয়মে খেললে আমরা গ্যালারিতে বসেও খেলা দেখতে রাজি আছি।