শিক্ষার্থীর ভোটপ্রবাহে অ্যান্টি-ফিলিং: ডাকসুর সম্ভাব্য চিত্র
মোসলেহ আহমেদ শাকিল, চিকিৎসক, পেন স্টেট হেলথ।
ডাকসু নির্বাচন সব সময়ই বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির একটি বড় প্রতিফলন—এখানে শুধু ভোট নয়, বরং বৃহত্তর জাতীয় রাজনীতির প্রবাহও ধরা পড়ে। এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের ভোটদানের প্রেরণা মূলত অ্যান্টি-ফিলিং দ্বারা চালিত হবে। অর্থাৎ তারা কাকে সমর্থন করছে তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কাকে বিরোধিতা করছে। এ কারণে শক্তিশালী কোনো প্রো-মেসেজ এখনো সামনে আসেনি, এবং ছাত্রসমাজে তা অনুপস্থিত বলেই মনে হচ্ছে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাচ্ছে তিনটি পক্ষ—শিবির, ছাত্রদল এবং অভ্যুত্থানের নতুন মুখ বা শক্তি (যেমন উমামা, বাকের, মেঘমল্লার)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সারাদেশের সাপেক্ষে কিছুটা লিবারেল পজিশন ধারণ করায় এখানে শিবিরের সমর্থন সবসময় একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে ছিল। এবার গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগ, প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট (ভিসি ইত্যাদি) কারণে ক্যাম্পেইনে শিবির ফুটেজ পেয়েছে বেশি। কিন্তু গুপ্ত রাজনীতি, মরাল পুলিশিং, ‘পিনাকী-ইলিয়াস’ প্রভৃতি ব্যক্তির সাপোর্ট—এসব সুইং ভোটারদের শিবির থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
ছবি- সংগৃহিত
চমক হতে পারে জগন্নাথ হল। গুপ্তলীগরা একটি শিক্ষা দেওয়ার আশায় উমামাকে ভোট দিতে পারে। কাদের, আবিদ, সাদিক কাউকেই না দিয়ে তারা বাম অথবা স্বতন্ত্র কোনো নারী প্রার্থীকেও ভোট দিতে পারে।
অন্যদিকে অভ্যুত্থানের নতুন শক্তিরা একটি ভিন্নধর্মী বিকল্প বার্তা দিতে পারত, যদি তারা ঐক্যবদ্ধ থাকত। কিন্তু বিভক্ত অবস্থায় তাদের ভোট ভাঙন ঘটবে এবং সেই সুযোগ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা কাজে লাগাবে।
সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ হলো গুপ্ত ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষার্থীরা। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১৫–২০ শতাংশ ভোটার তাদের আওতায় আছে, বিশেষত জগন্নাথ হলের মতো আবাসিক হলে। এরা নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে নয়, বরং বিরোধী মনোভাব দ্বারা চালিত হয়ে ভোট দেবে বলে অনুমান করা যায়। তাদের বড় অংশ যদিও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিয়ে দ্বিধায় ভুগতে পারে, তবু যদি অন্তত অর্ধেক ভোট দিতে যায়, তবে ছাত্রদলের পক্ষে ফল ঘুরিয়ে আনার মতো শক্তি তৈরি হতে পারে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে অংশ নিচ্ছে না—ফলে তাদের ভোটারদের একটি বড় অংশ এখনো দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় আছে।
আমার ধারণা, এবারের নির্বাচনে শিবির জেতার মতো জনসমর্থন অর্জন করতে পারবে না। অভ্যুত্থানের নতুন শক্তি যদি নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় আসত, তবে তারা ছাত্রদলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতো। কিন্তু বিভক্ত অবস্থায় তাদের সম্ভাবনা সীমিত। সুতরাং চূড়ান্ত লড়াই গড়ে উঠবে ছাত্রদল বনাম শিবির—কিন্তু এখানে ওয়াইল্ড কার্ড ভোটাররা ছাত্রদলের দিকে ঝুঁকলে ফলাফল ছাত্রদলের পক্ষেই যাবে।
গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিদের সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হলো—এই নির্বাচনের ফলাফল তাদের একটি রিয়ালিটি চেকে সাহায্য করবে। ৩,০০০–৪,০০০ ভোট নিয়ে তারা যখন দেখবে, ব্যক্তিগত ইগোর ওপরে তারা উঠতে পারেনি—সেই শিক্ষা এনসিপির একটু রাইট, একটু বামের ফেসগুলোকে শুধুমাত্র ‘এনসিপি’ ব্যানারে নিয়ে আসতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, দীর্ঘমেয়াদে সেটাই এনসিপির রাজনীতির জন্য ভালো হবে।
সবার জন্য শুভকামনা রইল।