গণপরিষদ বা সংবিধান সভা, নতুন সংবিধান মনে হতে পারে অযাচিত চর্বিত-চর্বণ, আতেলদের কারখানা, কিংবা অতি ভাবুক, পাঠচক্র বিপ্লবীদের দিবাস্বপ্ন, কিন্তু আমি যারা এই বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে গভীর চিন্তা করে দেখেছেন, তাদের থেকে যা বুঝতে পারলাম --
এটা ইতিহাসের সন্ধিক্ষণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পিভট পয়েন্টে দাঁড়িয়ে একটা নতুন সংবিধান এবং তা প্রণীত হবে নির্বাচিত গণপরিষদের মাধ্যমে, এটা বাস্তবায়ন করার এটাই শেষ সুযোগ।
পরবর্তী সরকার যদি এই একনায়কতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাহী বিভাগের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের একটা ফ্লড সংবিধান দিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসে, তাহলে ১) তার কোনো ইনসেন্টিভ থাকবে না সংবিধান সংস্কার কিংবা পরিবর্তন করার ২) করতে চাইলেও তাকে আদালত সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে বাধা দেবে (কারণ সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন)।
আমাদের বিচার, নির্বাহী, আর আইন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, ক্ষমতা হস্তান্তর, সংসদে উচ্চ-কক্ষ, নিম্ন কক্ষ, নারী আসনের সংখ্যা, এবং একই সাথে নারী আসনে নির্বাচন নাকি নির্বাচনী সিলেকশন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষমতার বিস্তৃতি এবং প্রধানের নিয়োগ ইত্যাদি প্রশ্নে যেই ঐক্যমত্য হয়েছে, তা আসলে পুরনো সংবিধানকে অকেজো এমনিতেই প্রমাণ করে, কারণ পুরনো সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে একজন অটোক্রেটের মতো ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে।
এখন গণপরিষদ আসলে কী? এটা হচ্ছে নতুন সংবিধান যা কিনা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ক্ষমতা হস্তান্তর, বিচার, নির্বাহী, আর আইন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সব মৌলিক আইন প্রণয়নকারীদের একটা পর্ষদ।
গণপরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ব্যক্তিবর্গ তাদের টেকনিক্যাল নলেজের কারণে সিলেক্টেড হয়েও আসতে পারেন। যেহেতু সবচেয়ে জনপ্রিয়, ভোটে ইলেক্টেডরা গণপরিষদ নিয়ন্ত্রণ করবেন, তাই গণপরিষদের সাথে নির্বাচন বানচাল কিংবা পেছানোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এবং সংবিধানের মূলনীতি গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্যরাই ঠিক করবেন, তাই এটা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার সুযোগও নেই।
এই বিষয়গুলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরবর্তী ১০০ বছরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে, কেউ যদি অটোক্রেট না হতে চান, তবে বর্তমান সংবিধান তাকে এমনিতেই অটোক্রেট বানিয়ে দেবে।
তাই যারা বুঝতে চেষ্টা করছেন নির্বাচনের আলাপের সাথে গণপরিষদের এবং নতুন সংবিধানের আলাপের সম্পর্ক কোথায়, তাদের জন্যে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ নোক্তা।