ফোবিয়া আর প্যানিক পেরায়ই বেশি বেশি দেখায় আমাদের; আনএক্সপেক্টেড সিচুয়েশনও বেশি বেশি দেখাতে পারে।
এই যে ধরেন, ডাকসুতে আমরা স্রেফ শিবির দেখছি; শিবির বা জামাত নিজেরাও হয়তো স্রেফ শিবিরই দেখছে। আসলেই কি তাই?
ডাকসুর জয়ে শিবির যতটা আছে, ঠিক ততটাই আছে শিবির মুলতবি রাখাও। মানে হলো, ঐ প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, নট শিবির। ফলে তাদের যে ইশতেহার, সেটা শিবিরের রাজনীতি নয়; বরং শিবিরের রাজনীতি আপাতত মুলতবি রেখে একটা মোর্চা তৈরি হয়েছে—এমন একটা মোর্চা বানানোর জরুরত আছে বলে শিবির মুলতবি রাখছে তাদের রাজনীতি। অনেকের ফোবিয়া আর প্যানিক এটাকে নিতান্তই শিবির বানিয়ে দিয়েছে, ফলে শিবিরের বাইরের বহু মানুষের চিন্তা আর কায়কারবারের ফসল জমা পড়ছে শিবিরের ভাণ্ডারে!
এইখানে ‘ঐক্যবদ্ধ’ মানে হচ্ছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা, বাকশাল আর ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজমের বাছুর–বাংলালি ন্যাশনালিজমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের ইউনিটির এজেন্ডা নিয়ে এগোনো—বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস আর বয়ান তৈরি হওয়া; শিবির এইটাকেই ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে লুফে নিচ্ছে। এটা নিতে পারত ছাত্রদল বা বাগছাসও, তারা সেটা নেয়নি; তারা বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক ইচ্ছাকে অস্বীকার করে বাকশালি ন্যারেটিভে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে দেশটাকে। ছাত্রদল বা বাগছাস বাদেও বামেরাও নিতে পারত; মোদি-বিরোধী মুভমেন্টে মেঘমল্লারের হাত ভাঙার ইতিহাসও তো আছে, মনে হয়।
সো, আমি বাংলাদেশের জনগণকে মাথায় রাখতে বলব। এই জনগণ নিজের দরকারে ১৯৩৭ সালে শেরে বাংলাকে বানিয়ে নিয়েছে, ১৯৪৭ সালে জিন্না, ১৯৭০ সালে শেখ মুজিব, ১৯৯০ সালে খালেদা জিয়া, ২০২৪ সালে নাহিদকে বানিয়ে নিয়েছে; তেমনি ডাকসুতে সাদিক কায়েম–জুমা–সর্বমিত্র। এরা দেশের জনগণের সঙ্গে এলাইন করেছে বলেই ইতিহাসের ঘটনা হয়ে উঠতে পেরেছে। জনগণের প্রতি দুশমনি করলে ফেলে দেবে সেই জনগণই, মুজিবের মতোই। এরা কারিগর না; জনগণই বরং এদের কারিগর।
অনেকে যেমন শেখ মুজিবকে পাকিস্তান ভাঙার দায় দিয়ে আসলে বাংলাদেশ পয়দা হওয়ার কৃতিত্ব দিয়ে দেয়, তেমনি শিবির থেকে বেরিয়ে দেশের জনগণের সঙ্গে এলাইন হয়ে, নিজের নামে হাজির না হয়ে, আরও অনেকের সঙ্গে মোর্চা বানিয়ে একটা কালেকটিভ ন্যারেটিভের ডাকসু জয়টাকে স্রেফ শিবিরের জয় হিসেবে দেখা হবে ঐতিহাসিক ভুল—অতীতের বহু ভুলের মতোই।