দীর্ঘ সাত বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রচার প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রার্থী বিতর্ক কোন কিছুতেই বড় ধরণের সহিংসতার কোন খবর পাওয়া যায় নি। এটা ইতিবাচক ব্যাপার৷ তবে নির্বাচন ঘিরে একটা বিশেষ পক্ষ থেকে অনলাইনে যে পরিমাণ বিষেদগার ও ঘৃণার চাষ করা হচ্ছে এ ব্যাপারে একটু চিন্তা করা দরকার। পাশাপাশি ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের তরফ থেকে যে প্রচারণা, অনলাইন হাইপ তৈরি করা হয়েছে সে ব্যাপারে কিছু লুপহোল আছে৷ এ ব্যাপারগুলো নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা দরকার মনে হয়, ভবিষ্যৎ রাজনীতির পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে।
১. অনলাইনে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি, ফেইক একাউন্ট নিয়ে অন্য প্রার্থীদের পোস্টে গিয়েও ইচ্ছাকৃত টক্সিসিটি ছড়ানো, অসংখ্য ফেইক আইডি দিয়ে নিজেদের প্রার্থীর ব্যালট নাম্বার কমেন্ট করা এগুলো কি সভ্য আচরণের মধ্যে পরে? কোন প্রার্থীর নিজের প্রচারণার পোস্টে গণ কমেন্ট করে নিজেদের প্রার্থীর ব্যালট নাম্বার প্রচার করা, গণহারে নেতিবাচক কমেন্ট করা, হাহা রিয়েকশন দেওয়া এগুলো রাজনৈতিক সহাবস্থানের সৌন্দর্য নষ্ট করে কিনা এটা বিবেচনার বিষয় ।
২. দ্বিতীয়ত কোন প্রার্থী রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে তা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করা যায়, কেউ মিথ্যা অভিযোগ দিলে সেটা খন্ডন করে পাল্টা বিবৃতি দেওয়া যায়, কিন্তু তাকে নিয়ে ক্রমাগত মানহানিকর কন্টেন্ট বানানো, পুরো জনশক্তিকে অনলাইনে যুক্ত করে বুলিং করা, হুমকি দেওয়া, এমনকি বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে পর্যন্ত হুমকি দেওয়া এগুলো কি সভ্য রাজনৈতিক আচরণের মধ্যে পরে?
৩. তৃতীয়ত প্রকাশ্যে এমনকি মেইনস্ট্রিম প্রার্থীদের দ্বারাও প্রচার হচ্ছে কখনো কখনো যে, নারী ভোটাররা ক্রাশ ম্যাটেরিয়াল দেখে, প্রার্থীরা বিবাহিত / অবিবাহিত কিনা সেটা খোঁজ নিয়ে, এমনকি প্রার্থীর সৌন্দর্য বিবেচনায় ও নাকি নারী প্রার্থীরা ভোট দিবেন৷ এর উপর ভিত্তি করে তারা প্রেডিকশন ও দিচ্ছেন৷ এই ব্যাপারটা কোন পর্যায়ের মিসোজেনিস্ট সেটা তারা বুঝতেও পারেননি৷ মেয়েদেরকে জাস্ট রাজনৈতিকভাবে অসচেতন, চেহারা দেখে গলে যাওয়া, যে কোন উপায়ে ভোট আদায় করার মেশিন, এ ধরণের একটি হাইপোথেসিস তারা গর্বের সাথেই সামনে আনার চেষ্টা করছেন। এতে মেয়েদের সম্মানহানি হচ্ছে কিনা তাতেও তাদের কোন চিন্তা নেই। আশা করি সচেতন নারী ভোটাররা এ বিষয়টা বিবেচনা করবেন। কারো রাজনৈতিক আদর্শ না দেখে হাসি, চেহারা, কথা শুনেই আপনি তাকে ভোট দিবেন কিনা সেটা আপনাদের বিবেচনা
৪. অনলাইনে সারা দেশের সমস্ত জনশক্তিকে ইনভল্ভ করে, একটা প্যাসিভ পিআর প্রেসার তৈরি করে কৃত্রিম হাইপ তৈরি করে এক ধরণের সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ারের চেষ্টা, যেটা অনেকসময় মানুষের ভিড়ের সাথে থাকতে চাওয়ার প্রবণতা বা জয়ী পক্ষে থাকতে চাওয়ার প্রবণতাকে ট্রিগার করে। এই গেইমটা তারা বেশ ভালো খেলেছে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা মনে করি, ঢাবি শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান, তারা এই ট্রিক ধরতে পারবে৷
৫. আরো একটা বিষয় নামে ইসলামি দল হলেও তারা নির্বাচন উপলক্ষে সর্বোচ্চ লিবারেল আচরণ করছে৷ সংবাদ সম্মেলনে নারী প্রার্থীদের সাথে কোনরকম দূরত্ব না রাখা, নারীদের সাথে অবাধে সেলফি তোলা এমনকি গানের আসর করা। তো এই সেকুলার ধরণের লিবারেল আচরণ কি তারা নির্বাচনে জয়ের পরও বজায় রাখবে? তাদের পূর্বের মোরাল পুলিশিং এর ইতিহাস কি ভুলে যাবে? আর তাই যদি হয়, তাহলে ইসলামের নামে সদস্য অন্তর্ভুক্তি কেন? এটা দ্বিচারিতা নয় কি?
৬. সবশেষ তাদের প্রতিষ্ঠান গুলোকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের ম্যানিপুলেশনের চেষ্টা। ইসলামি ব্যাংক, ফোকাস কোচিং সেন্টারসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানকে এ কাজে তারা যুক্ত করছে৷ তাদের প্যানেল জয়ী হলে ল্যাপটপ উপহার, অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপের টোপ এসব দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের, প্যানেল থেকে বিরোধিতা ও করা হচ্ছে না৷ রমজান মাসে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের ইফতারের সাথে ৫০০ টাকা দেওয়ার দৃশ্য আমাদের মর্মাহত করেছে। ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স বা চ্যারিটি পলিটিক্সের এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তারা অপমান করতে পারেন কিনা? স্কলারশিপের লোভ দেখিয়ে ভোট চাওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক মত প্রকাশের এজেন্সি কে সংকুচিত করে না ? যে আপনার প্রতি এই মনোভাব পোষণ করে যে আপনাকে লোভ দেখিয়ে ভোট আদায় করা যাবে, তাকে নেতা মানতে আপনার চিন্তা করা প্রয়েজন কিনা?
ঢাবি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা, আপনারা যথেষ্ট সচেতন। আপনাদের বলার কিছুই নাই৷ তবুও অনেক সময় আমরা কোন একটা প্রবাহে ভেসে যাই, কৌশলে আমাদের চিন্তাগুলো blunt করে দেওয়া হয়৷ আপনারা কার রাজনীতি করে দিবেন এ ব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখবেন৷ আগামীকাল আপনার পলিটিক্যাল লিটারেসির পরীক্ষা। আপনি দেখে শুনে বুঝে, সব রকম manipulation ও propaganda র উর্ধ্বে উঠে ভোট দিবেন৷ আপনার মূল্যবান ভোট যেন কেউ ছলে বলে কৌশলে আদায় করতে না পারে৷ সেই প্রার্থীকে বিবেচনায় রাখুন যে আপনার বিবেচনাকে সম্মান জানিয়ে আপনাকে খাওয়ানোর অফার দেয়নি, এলাকার নেতা দিয়ে আপনাকে কল দিয়ে ভোটের জন্য চাপ দেয়নি, সর্বোপরি আপনাকে কোন প্রলোভন দেখিয়ে ভোট আদায়ের চেষ্টা করে নি। এটা শুধু প্রার্থীদের ভোট না, এটা আপনার জন্য ও নিজের রাজনৈতিক বোঝাপরা প্রমাণের পরীক্ষা। আপনার আদর্শিক অবস্থান প্রমাণের পরীক্ষা।